শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে থাকবেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সফরে বেল্ট অ্যান্ড রোড নীতির আওতায় পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে চীন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সিনহুয়া।
সিনহুয়া জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে চায় চীন। প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতায় সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সুবিধা ও সমতা নিশ্চিত করার চীনা অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন প্রেসিডেন্ট শি তিনি।
উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখনই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগ চীনের প্রাচীন সমুদ্র ও সড়কপথের সিল্ক রোড পুনরুদ্ধারের প্রয়াস, যে রাস্তা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। প্রায় ৬০টি দেশ ও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মূল সিল্ক রোডের অস্তিত্ব ছিল আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, এটা ছিল বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। এর মধ্য দিয়ে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিনিময় হয়েছে। চীনের নতুন ‘সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট’ও একই কাজ করবে। চীনের দাবি অনুযায়ী এর মধ্য দিয়ে নতুন নতুন ও উন্নততর অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংস্কৃতি ও চিন্তার প্রসার হবে, ফলে সবারই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় কৌশলগত সহযোগিতা এবং অঞ্চলগত কানেকটিভিটি জোরদার করার চেষ্টা করবেন শি জিনপিং।
পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনা উদ্যোগে শুরু হওয়া একগুচ্ছ প্রাথমিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহযোগিতা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করছে দেশটি।
বাংলাদেশে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত খাত, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে কর্ণফুলি নদীর পানির নিচে টানেল তৈরি ও বিদ্যুৎ বণ্টনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতুর সঙ্গে যুক্ত করতে এন-এইট মহাসড়ক নির্মাণের মতো বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ হচ্ছে চীনা উদ্যোগে।
বাংলাদেশে চীনের সাবেক এক দূতকে উদ্ধৃত করে সিনহুয়ার খবরে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের কেন্দ্র বিবেচনা করা হয়েছে বাংলাদেশকে। শি জিনপিং এর এই সফরে, বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক ঐকমত্য জোরদার করা অর্থনৈতিক করিডর প্রতিষ্ঠা, এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে চীন।
শি জিনপিং হলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো যিনি বাংলাদেশ সফর করছেন। দুই দেশই চায় পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। বাংলাদেশ সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে বাংলাদেশের অবকাঠামো, উৎপাদন সক্ষমতা, জ্বালানি এবং যোগাযোগ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতায় চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।