সরকারি নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর বরাদ্দের কারণে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ক্ষেত্র তৈরি হয় বলে মনে করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা বলছে, এই ক্ষেত্রে নম্বর বেশি থাকায় যোগ্যতম প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়। এ জন্য বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে ১০০ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্থাটি।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর বেশি থাকলে দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির শঙ্কা থাকে। এ কারণেই বলছি বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর কমিয়ে ১০০ নম্বর করা হউক। এটা শুধু বিসিএস নয়, যেকোনো মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ১০০ থাকা উচিত।’
দুদকের এই সুপারিশের সঙ্গে পুরোপুরি একমত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষায় ২০০ নম্বর থাকলে স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকে। আমরা পাকিস্তান আমলে দেখেছি স্বজনপ্রীতি করে একজন শিক্ষার্থীকে ২০০ এরমধ্যে ১৮০ নম্বর দেয়া হল। সে পেয়ে গেল ফরেন সার্ভিস। আর একজনকে পছন্দ হল না তাকে শুধু ৮০ দেয়া হল। সে লিখিত পরীক্ষায় ভাল করেও ফেল করল। সুতরাং মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর থাকা উচিত নয়।’
মৌখিক পরীক্ষার নম্বর কমানো ছাড়াও নিয়োগের জন্য চার ধরনের পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে দুদক। সাধারণ ক্যাডারভুক্ত পদসহ অন্যান্য নবম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব সকল ধরনের পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন-১, নবম গ্রেডের নিম্নে সকল রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারি পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন-২, সকল ধরনের টেকনিকাল পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন-৩, সকল ধরনের শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন-৪ গঠনের সুপারিশ করা হয়।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যদি দক্ষ ও উন্নত জাতি পেতে চাই তাহলে মেধার মূল্যায়নের বিকল্প নেই। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবীদের মূল্যায়ণ করতে হলে লিখিত পরীক্ষা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা- সব জায়গায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘যেকোন নিয়োগের ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা এবং মেধার মূল্যায়ন করা উচিত। এজন্য যদি চারটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করতে হয় তাতে আমার আপত্তি নেই।’
দুদকের এই সুপারিশের বিষয়ে সরকারি কর্মকমিশন-পিএসসির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং সদস্য আনোয়ারা বেগম ও উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত ফোন ধরেননি।